ল্যাপটপের যত্ন-আত্তির কিছু টিপস


বর্তমান কর্মময় জীবনে অতি প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র ল্যাপটপ। গুরুত্বপূর্ণ এ যন্ত্রটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে চাই আরো একটু যতন, আরো একটু সচেতনতা। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। তাহলে এর স্থায়িত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। ভালো থাকতে পারে ব্যাটারি লাইফও।
এ পর্বে জেনে নিই ল্যাপটপের যত্ন-আত্তির কিছু টিপস।
০০ ল্যাপটপের ওপর ভারী কিছু রাখা ঠিক নয়। যেহেতু ল্যাপটপের পুরুত্ব খুব বেশি নয় এবং এর অপর প্রান্তে ডিসপ্লে (মনিটর) অংশ থাকে, সেহেতু ভারী কোনো কিছু রাখা বা কোনো চাপ পড়ার কারণে ল্যাপটপটির ডিসপ্লেতে সমস্যা হতে পারে। আর প্রযুক্তির বাজারে ডিসপ্লে পরিবর্তন করাটা ব্যয়বহুলও। তাই এ ব্যাপারে বাড়তি একটু সচেতনতা প্রয়োজন।
০০ অনেক সময় আমরা হাতের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করি। এক্ষেত্রে ল্যাপটপ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানোর সময় কখনোই শুধু ডিসপ্লের (মনিটর) অংশে হাত রেখে সরানো ঠিক নয়। হাতে রেখে কাজ করার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত; যেন ল্যাপটপটি যেন নিচে পড়ে না যায়। যদিও এখন অনেক ল্যাপটপেই ‘ফল প্রটেকশন’ দেয়া থাকে তবু সেই প্রটেকশনটি খুব কম দূরত্বে থেকে পড়ার ক্ষেত্রেই কাজ করে। মনে রাখা উচিত, ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যাদির গ্যারান্টি অথবা ওয়ারেন্টির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন উল্লেখ থাকে এবং সেই নিয়মের বাইরে কোনোভাবে যদি আপনি আপনার ডিভাইসটি নষ্ট করে ফেলেন সেক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি অথবা গ্যারান্টি কাজে আসে না।
০০ কাজ শেষ হলে ল্যাপটপটির লিড নামিয়ে রাখুন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা পাবে আপনার ল্যাপটপ। এ-ছাড়া স্ক্রিনে ময়লা বা দাগ পড়বে না।
০০ স্ক্রিন প্রটেক্টরের সঙ্গে সঙ্গে কিবোর্ড প্রটেক্টরও ব্যবহার করুন। এতে কিবোর্ডের কিগুলোর ফাঁক দিয়ে ধুলো জমবে না। মাঝে মাঝে মিনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়েও কিবোর্ড পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
০০ আমরা অনেকেই বাসার কাজের জন্যে ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকি। এক্ষেত্রে সাধারণত চার্জার লাগিয়েই ল্যাপটপ ব্যবহার করি। একটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত, তা হচ্ছে প্রতিটি ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারারই তাদের ল্যাপটপের ব্যাটারি সুরক্ষায় কিছু অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ডেল তাদের ল্যাপটপের সঙ্গে ‘কুইকসেট’ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করে থাকে। সেখানে কিছু অপশন থাকে। যেমন- কত শতাংশ চার্জ হওয়ার পর ব্যাটারি আর চার্জ গ্রহণ করবে না ইত্যাদি। কুইকসেটের সব ফিচারগুলোই ব্যাটারি রিলেটেড। আপনিও আপনার ল্যাপটপটির জন্যে এরকম অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ব্যাটারিকে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত রাখতে পারেন। আর সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ব্যাটারিতে ল্যাপটপটি চালাবেন। এতে করে আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো থাকবে।
০০ সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে গরম- এমন কোনো স্থানে ল্যাপটপ রাখবেন না বা ব্যবহার করবেন না। তবে মাঝেমধ্যে ব্যাটারির চার্জ অর্ধেক রেখে সূর্যের আলোয় ব্যাটারি খুলে কিছুক্ষণ রেখে দিলে তা ব্যাটারির জন্যে ভালো।
০০ ল্যাপটপে আপনার প্রয়োজন নেই এমন সফটওয়্যার ইন্সটল করবেন না। দরকার হলে আপনার হার্ডডিস্কে পরবর্তী সময়ে সফটওয়্যারটির ব্যাকআপ ফাইল রেখে দিতে পারেন।
০০ মাঝে মধ্যেই সিস্টেম ক্লিনার সফটওয়্যার দিয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটারটির হার্ডডিস্ক স্ক্যান করাবেন। কোনো রকম সিস্টেমের ত্রুটি পেলে সিস্টেম কেয়ার অ্যাপ্লিকেশনগুলোই তা ফিক্স করে দেবে। এ ক্ষেত্রে টিউন-আপ ইউটিলিটিস, অ্যাডভান্স সিস্টেম কেয়ার ইত্যাদি সফটওয়্যারগুলো বেশ কাজের। এগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটি মূলত ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ- দুটোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
০০ সরাসরি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক থেকে মিডিয়া ফাইল প্লে না করাই ভালো। কেননা এক্সটারনাল ডিভাইসগুলোর ডাটা আদান-প্রদান করতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে কপি করে ব্যবহার করুন। একই নিয়ম পোর্টেবল সিডি-ডিভিডি রমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
০০ প্রয়োজন না হলে ব্লুটুথ এবং ওয়াইফাই চালু করে রাখবেন না এবং ‘শাটডাউন’ ও ‘স্লিপের’ পরিবর্তে ‘হাইবারনেট’ অপশন ব্যবহার করুন। হাইবারনেট হচ্ছে এমন একটি অবস্থায় চলে যাওয়া; যা আপনার সেই মুহূর্তের কাজগুলো একটি ফাইলে জমা রেখে আপনাকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাবে; যা প্রায় বিদ্যুৎ ব্যবহার না করারই সমান। পরবর্তী সময়ে সিস্টেম রিজিউম করলে আপনাকে আপনার সব কাজের প্রগ্রেস ঠিক সেখানেই ফিরিয়ে দেবে; যেখানে আপনি হাইবারনেট করেছিলেন।
আপনি স্লিপ মোডও ব্যবহার করতে পারেন। এটি হাইবারনেটের চেয়ে দ্রুতগতিতে সিস্টেম রিজিউম করতে সক্ষম। কিন্তু এটি হাইবারনেটের চেয়ে কিছুটা বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে থাকে। তাই ব্যাটারির চার্জ ধরে রাখতে ‘হাইবারনেট’ অপশনটিই অধিক কাজে দেয়।
০০ ল্যাপটপ যতই গরম হবে ল্যাপটপের ততই সমস্যা হবে। এজন্যে চেষ্টা করবেন যতটুকু সম্ভব ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখতে। বিছানা, বালিশ কিংবা কুশনের ওপর রেখে ল্যাপটপ চালানো ঠিক নয়। কারণ এতে ল্যাপটপটির বাতাস চলার পথ বন্ধ হয়ে এটি ক্রমশই গরম হয়ে ওঠে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন