স্কুলে ৮০ টাকা বকেয়া ফির জন্য শাস্তি, অপমানে ছাত্রীর আত্মহত্যা


মাত্র ৮০ টাকার জন্য শাস্তি ভোগের অপমান সইতে না পেরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের মধ্য বাগাদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ছাত্রীর নাম সাথী আক্তার (১৪)। সে মধ্য বাগাদী গ্রামের দিনমজুর দেলোয়ার হোসেন শেখের মেয়ে। সে বাগাদী গণি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ‘খ’ শাখার ছাত্রী ছিল।
নিহত ছাত্রীর কয়েকজন সহপাঠীর ভাষ্য, তাদের পরীক্ষার নির্ধারিত ফি ৪০০ টাকা। এর মধ্যে সাথী ৩২০ টাকা পরিশোধ করে। বাকি থাকে ৮০ টাকা। এই টাকার জন্য সাথীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রোববার বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরে অন্য শিক্ষকেরা তাদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান।
সাথীর মা শায়লা বেগম বলেন, সোমবার সকালে সাথী বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে তার কাছে পরীক্ষার ফি পরিশোধ করার জন্য ৮০ টাকা চায়। তিনি বাড়ির অন্যদের কাছে টাকা জোগাড় করার জন্য যান। তখন সাথী বিদ্যালয়ে না গিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। তার ছোট মেয়ে তা দেখতে পেয়ে চিৎকার করে। এ সময় তিনি দ্রুত ঘরে ঢুকে সাথীকে নিচে নামান। তবে মেয়ে আর তখন বেঁচে ছিল না।
বাবা দেলোয়ার হোসেনের দাবি, স্কুলের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শাস্তি ভোগের অপমানেই তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, সাথীর আত্মহত্যার খবর শুনে গ্রামের বিক্ষুব্ধ লোকজন বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। এ সময় সব শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে চলে যায়। শিক্ষকসহ অন্যরা পালিয়ে যান। বর্তমানে বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ।
শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি হজের কাজে ঢাকায় ব্যস্ত। ঘটনা সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বিল্লাল বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা ঘটনা সম্পর্কে জেনেছেন। সাথীর মা-বাবার অভিযোগ, স্কুলের ফির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শিক্ষকের লাঞ্ছনায় তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
সাথীর মৃত্যুর খবর শুনে চাঁদপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল করেন।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালী উল্যাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাথী আক্তার কী কারণে আত্মহত্যা করেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো মামলা হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন